না পড়া চিঠি
একটা উড়ো চিঠি পেলাম। ডাকে নয় হাতে হাতে। শুরু হলো প্রেরকের নাম খোঁজা, শেষটাতেই নজর দিলাম আগে, কে ? ইতি- লিখে থেমে গেছে হাত- নাকি কলমের কালি, বোঝা গেলো না। রাবার ঘসার চিহ্ন দেখা যায়; এ পাশ করি, ও পাশ করি করি হস্তাক্ষরের দাগ অনুসন্ধানে। নাহ্, উদ্ধার করা যাচ্ছে না কিছুতেই। মনটায় বইতে থাকে কখনো ফাগুন কখনো বৈশাখ, কে ? কে পাঠালো চিঠিটা ! মনে পড়ে গেলো মর্জিনার ড্যাবড্যাবানো চোখ। চোখ দু‘টো হরিণ ডাগর বলে অহংকারে যেন মাটিতে পা-ই পড়ে না; ছোট কাকা এ সবে ওস্তাদ, যাবো তার কাছে ? কানটা তাহলে আর আস্ত থাকবে না। একেবারে লাল করে দেবে। তারপর, তুলে দেবে মা চণ্ডীর হাতে অর্থাৎ আমার জন্ম-জননীর কাছে। বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে ওঠে। ওররে বাপরে- চিঠিটা ভাঁজ করে বুক পকেটে রাখি। পুকুর পাড়ে যাই।, ভালো লাগছে একাকীত্ব। একটা শুকনো মাটির দলা তুলে জো-রে ছুড়ে মারি পুকুরের জলে। পুকুরের পানিতে কেমন ঢেউ খেলে যায়, যেমন ঢেউ খেলে যাচ্ছে এই বুকের মধ্যে।
পকেটে কি ? আজ আবার টাকা চুরি করেছিস ? খপ করে ধরে ফেলে মা পকেট ধরা ডান হাত। সামান্য আত্মরক্ষার চেষ্টাতেই ঠাস্ ঠাস্ ঠাস্। কিছু মনে রাখার যোগ্যতা রইলোনা আমার। ছোট কাকার হাসির শব্দ কানে যেতে মনে হলো বেঁচে আছি। বারান্দায় খেতে বসেছে বাজান। দাদা-দাদীতো হেসেই খুন। এক্সপার্ট ছোট কাকা বের করে ফেলেছে প্রেরকের নাম। ঠিক তখুনি মনে পড়লো চিঠি না পড়ার কথা। ইশ্, চিঠিটা পড়লাম না কেন তখোন ? ঠাস্ করে আরেকটা চড় পড়লো বাম গালে। কবে থেকে করছিস এ সব ? মায়ের কণ্ঠে চাবুকের ঝাঁঝ !
তিন দিনের জ্বর থেকে উঠে পুকুর পাড়ে বসে সেই আগের দিনের মতো পানির উপর রাগ ঝাড়ছিলাম। ছোট কাকার সাথে মর্জিনা আর জোসনা। কিরে, তোর ব‘লে জ্বর ? মর্জিনার কণ্ঠ শুনে মুখ তুলে তাকাই, তাহলে কি মর্জিনা ! কিন্তু, জোসনা আজ কোন ঝামটি দিলো না কেন ? ছোট কাকার দিকে তাকাতেই বলে দিলো- নাহ্, মিয়া ভাইকে কথা দিয়েছি আমি।
আমার না পড়া চিঠির প্রেরকের নাম আজো জানি না আমি। দাদা-দাদী-পিতা-মাতা সবাই অন্তর্ধানে। ছোট কাকাও এখন মুরুব্বী। কেবল আমার চোখে আজো অমলিন মর্জিনার ড্যাবড্যাবানো হরিণ ডাগর চোখ, আর জোসনার মুখের ঝামটি- তাতে তোর কি !
-
- সাগর আল হেলাল
০৭.০২.২০২২
Like my page & Follow my website
ReplyDelete