Header Ads

Header ADS

দ্বিধান্বিত করতলে: একটি আলোচনা

 

আমি যদি একদিন না মদ খাই তাহলে আমি কাফির।এ বাক্যটি বলেছেন উর্দু ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি মির্জা গালিব। মোঘল রাজদরবারের সভাকবিও ছিলেন তিনি।ইংরেজি সাহিত্যে যেমন শেক্সপিয়ার, তেমনি উর্দু সাহিত্যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছেন মির্জা গালিব। উর্দু ও ফারসী কবিতার জগতে শ্রেষ্ঠ কবি মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ খান গালিব ১৭৭৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর মুঘল ভারতের আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে প্রভাবশালী উর্দু ভাষার কবি। তিনি তার নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বেঁচে থাকতে তার গুণকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও, পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্বীকৃতি দিবে। ইতিহাস এর সত্যতা প্রমাণ করেছে। উর্দু কবিদের মধ্যে তাকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি লেখালেখি হয়েছে।

 

গালিবের কবিতায় সুফীবাদী প্রভাব লক্ষ্য করা গেলেও ব্যাক্তিজীবনে তিনি খুব একটা ধর্মকর্ম পালন করতেন না, তিনি প্রচুর মদ খেতেন। একবার মীর্জা গালিব মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। তখন মুসল্লীরা তাকে বাঁধা দিয়ে বলল- মসজিদ আল্লাহর ঘর, মদ্যপানের জায়গা নয়। গালিব তাকালেন মুসল্লীর দিকে। তারপর আরেক চুমুক খেয়ে আওরালেন-

 

“পিনে দো ব্যায়ঠ কার
মসজিদ মে জানিবাঁ,
ইয়া ও জাগা বাতা
যাঁহা পার খুদা নেহি।


অর্থাৎ-
মসজিদে বসেই পান করতে দাও বন্ধু,
নইলে এমন জায়গার কথা বল
যেখানে খোদা নাই।

 

পাঠ প্রক্রিয়ায় আড্ডা একটি চরম উৎকর্ষিত ব্যবস্থা। এখানে লেখা পাঠের চেয়েও লেখক পাঠের সুযোগ থাকে। জীবনকে অধ্যয়ন করতে গেলে মানব চর্চা অতীব জরুরী। এমনই এক সাহিত্য আড্ডায় একখানি বই আমার হাতে এসে গেলো। সেই বইখানি নিয়ে দুটি কথা লেখার ইচ্ছা প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠা দেখার পর, মাঝখান থেকে একটি কবিতা পাঠের জন্য গ্রন্থটি উন্মুক্ত করলাম- দেখলাম ৩টি অণুকবিতার শিরোনাম গালিবনামা। সে কারণেই এ কথাগুলোর অবতারণা।

 

কাব্যগ্রন্থঃ দ্বিধান্বিত করতলে

কবিঃ মাহমুদ মৌসুম

প্রকাশকঃ দিব্যপ্রকাশ, ৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা১১০০

প্রচ্ছদঃ মোবারক হোসেন লিটন

গায়ের মূল্যঃ ১০০ টাকা US $ 5

ISBN : 978 984 90545 9 7

 

পাবনা শহরতলীতে ১৯৭৯ সালে মাহমুদ মৌসুমের জন্ম। ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এন্ড টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যক্ষ ও পরিচালক মাহমুদ মৌসুমের বই পড়া, গান শোনা আর ভ্রমন নিয়ে নিজস্ব ভূবন। দ্বিধান্বিত করতলে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ।

 

চমৎকার প্রচ্ছদ, মনোরম বাঁধাই ৪ ফর্মার কাব্যগন্থে মোট মোট ৫০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। কবির কবিতায় প্রকৃতি, প্রেম ও দ্রোহ পাঠকের মনে ভিন্নধর্মী এক অনুভূতির সূচনা করে, এ কথা প্রকাশকের। বইখানির গঠন, মুদ্রণশৈলী চমৎকার। ২০১৫ বইমেলায় প্রকাশিত বইখানি সত্যি সত্যি পাঠকের মনে বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি করে থাকবে এটা মনে করা যায়।

 

কাব্যগন্থের নামে প্রথম কবিতা দ্বিধান্বিত করতলে। আপেক্ষিক জীবন সময় আঙ্গুলের ফাঁক গলে চলে গেছে। কবির সামনে কেবলই শূন্যতা। শূন্যতাও আসলে আপেক্ষিক। সময়চক্রে শূন্যতা ও পূর্ণতার পিঠ ঠেকানো অবস্থা। কবি কামিনী রায়ের পাছে লোকে কিছু বলে কবিতা আমরা জেনেছি। আসলে ভয়, দ্বিধা, সংকোচ মানুষকে সংকীর্ণ করে দেয় এ কথা-ই কি কবি বুঝাতে চান নি !

 

যদি তোমাকে পাই ভুল স্বীকার করে তুমি নেই বলে আত্ম আলোচনায় নিমগ্ন ছিলেন তার পরের কবিতায়। কেউ বোঝে না আজ সকালে বঙ্গাব্দ চৌদ্দশ একুশ। গ্রীষ্মের দাবদাহে কবি তার তৃষ্ণা নিবারণে নারীর প্রতি আহবান রাখেন-

 

নারী, হাতে রাখো হাত

চোখে চোখ,

তোমার আমার প্রণয়ের

মহাকাব্য রচিত হোক।

 

অমীমাংসিত কথা ছিলো তুমি চলে যাবার পর অপরাধী আমি যদি ঝরে যাই প্রতিদানে আমার আত্মকথা কবিতার উপমা, নিঃশব্দতার গর্জন, বিদায়ের পঙক্তিমালা-ক্ষয়ে যাওয়া দিন, প্রণয়গাঁথা এই জনপদে সবকিছু সাথে নিয়ে যেনো একদিন হারিয়ে যাই। তিনি লিখেন-

 

অস্থির নিদ্রা যায় বিনিদ্র রাত

হাতখানি ভাষাহীন কীর্তিনাশা

ভাসায় না বেহুলা প্রেমের তরী

পরীরা গুঞ্জে নিকষ প্রান্তরে

অন্তরে বাজে বিষের বেহালা।

 

তখন হাওয়া ছিলো মৌসুমী আর ছিলো দীঘির আঁধার, কবিতার লাশ হয়ে কবি লিখছেন-

 

কামার্ত স্টেনগান

কামনা আরাধনায় সন্ত্রাস

রক্তাক্ত দলিল বয়ে বেড়াই

যত্রতত্র ভুল মননে;

কবিতার লাশ পড়ে আছে কফিনে।

 

কবি কবিতা লিখেন বলেই স্নায়ুযুদ্ধের পরও গন্তব্য পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। অনন্ত নক্ষত্র ঘুরে ইথারের সুরে কৃষ্ণবিবরে পা রেখেও কবি দুর্দমনীয় ইচ্ছা শক্তিতে শেষ পর‌্যন্তও জেগে আছে এই বাংলায় আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের প্রত্যাশায়।

 

কবির কবিতার উপস্থাপনা ভালো। কিছুটা মেদবহুল,অন্যমনষ্ক করে দেয়। তবে সাহিত্য চর্চায় একটা মননশীলতার নকশা পাওয়া যায় তার কবিতায়। কবি শব্দ চয়নে আরো একটু মনোসংযোগ বাড়ালে ভালো করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করা যায়। পরিশেষে সাহিত্যের জয় হোক, জয় হোক কাব্যচর্চার। সব ফুলে মালা হয় না সত্য, তবে এমন ফুলও আছে যা দিয়ে মালা গাঁথা না হলেও- ঠাঁই পায় তা ঈশ্বর চরণে।

 

সাগর আল হেলাল

কলামিস্ট

১৭.০৩.২০২২

 








1 comment:

  1. পাবনার বন্ধুরা মন্তব্য করুন।

    ReplyDelete

Powered by Blogger.