Header Ads

Header ADS

লিটল ম্যাগাজিন ও কিছু কথা

রাত জেগে বন্ধুদের লেখার ফন্ট পরিবর্তন করছি। ভেঙে যাওয়া শব্দগুলি ঠিক করছি। বানানও দেখছি সাধ্য মতো। কেন? একটা লিটল ম্যাগাজিন করতে যাচ্ছি। লিটল ম্যাগাজিন করতে চাই কেন? না করলে অনুজেরা শিখবে কার কাছে? তবে কখনো খারাপ লাগে- এই প্রহরে এসেও পথ দেখাতে পথে নামতে হয়! যখন দশম বা একাদশ শ্রেণিতে পড়েছি তখন এবং তার পরবর্তী বেশ ক’বছর এ কাজ করেছি।

আগের সময়ে লেখা আসতো ডাকে। হাতে লেখায়। কী সুন্দর পরিপাটি! সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা পাঠাতেন বন্ধুরা। লেখার অপর পার্শ্বের ডান দিকে নিজের পূর্ণ ঠিকানা। লেখার সাথে অনেকেই চিঠিও লিখতেন। ভালোবাসা রাশিরাশি। বন্ধুদের হাতের লেখা চেয়ে চেয়ে দেখেছি। দেখেছি নাম স্বাক্ষরে বাহারী মুন্সীয়ানা।

আর এখন ? লিটল ম্যাগাজিনের জন্য লেখা চাইতে চাইতে মুখ ব্যথা হয়ে যায়। কেউ-ই পর্যাপ্ত সময় পান না লেখা পাঠাতে। সকলেই ব্যস্ত। ব্যস্ত কিসে? লিখতে। লেখাতো টাইপ করাই আছে, তাহলে? অনেকের কথার ইঙ্গিতে জানতে পারলাম, অনুরোধ করে লেখা নেওয়ার পর আরও অন্য কিছু চাওয়া হয়। এ জন্য যারা ভালো লেখেন, ওনারা লেখা পাঠাতে চান না। সত্যিতো, লেখার সাথে আর কি দেবেন?

লিটল ম্যাগাজিন বের করেন বা করছেন যারা, তাদের সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তারা বলেন- দোষারোপ একটা ট্রাডিশন হয়ে গেছে। কারো কাছেই আমরা কোনদিন কিছু চাই না। ওনারা না দিয়েই দোষী করে যান। তবে হ্যাঁ, তরুণদের কাছ থেকে আমরা কিছূ সহযোগিতা নিয়ে থাকি। কিন্তু কারো কাছ থেকে জোর করে নয়। তারা খুশি হয়েই দিয়ে থাকেন। ঠিকইতো, কেউ যদি সাহিত্য বিকাশে খুশি হয়ে কিছু সহযোগিতা করতিই চান- অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে। তবে, ভালো লেখাওতো প্রকাশের প্রয়োজন আছে, না কি ? ভালো লেখককে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। কারণ তারা দ্বিগুণ চেষ্টা করে থাকেন। তবে ভালো লেখক বন্ধুরাও এমন কিছু না বলেন, যাতে তরুণেরা নিরুৎসাহিত হয়। এই তরুণেরাইতো আগামীতে উন্নত লেখা উপহার দিবেন। তাদের ঝরে যাওয়া বন্ধ রাখার দায়িত্ব অগ্রজ লেখকদের।

সত্যি বলতে কি, আমি লিখি সে জন্য নয়। সৃজনশীল কাজ মেধাবী ছাড়া হয় না। এ যুগে যখন অধিকাংশ মেধাবীরা কম্পিউটার সায়েন্স, এমবিএ ইত্যাদি করে দেশে বিদেশে উন্নত চাকরী নিয়ে মোটা বেতনে কর্মরত হচ্ছেন। উন্নত জীবন যাপনে ব্যস্ত রয়েছেন। ঠিক সেই সময়ে তাদের মতো বা ক্ষেত্র বিশেষে তাদের চেয়েও মেধাবী কতিপয় মানুষ সামাজিক মূল্যবোধ, জীবনের অসংগতি, অর্থ প্রাপ্তির অনৈতিক প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে কলম ধরে কষ্টের জীবন যাপনে ব্রতী হয়েছেন। তারা, কিছুটা হলেও সম্মান প্রাপ্তির দাবী রাখেন বৈ কি ! তাহলে কি হবে ? আমাদেরকে চিন্তার বৈপরিত্য থেকে ফিরে আসতে হবে। ভিন্ন চিন্তা কমিয়ে সম্পূরক চিন্তায় ব্রতী হতে হবে। সকলের পক্ষে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করার মতো ঝামেলার কাজ করা সম্ভব নয়। যারা প্রকাশ করছেন, তারা যাতে নির্বিঘ্নে এ কাজ করতে পারেন তার জন্য অন্তত পক্ষে উৎসাহিত করার মতো সামান্য কষ্ট স্বীকার করতে হবে। যারা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন- তারা ভালো লেখা সংগ্রহে সহায়তা করতে পারেন। সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা লেখকগণ বিজ্ঞাপন পেতে সহযোগিতা করতে পারেন। পাশে ডেকে কাজের স্বীকৃতিও দিতে পারেন।

শেষ কথা- লেখক সৃষ্টিতে লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব কতখানি তা একজন লেখক যথার্থভাবেই জেনে থাকবেন। সুতরাং, এ কাজটি যাতে অব্যাহতভাবে চলতে থাকে তার দিকে আমাদের সকলেরই নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

-

সাগর আল হেলাল

১০.০৩.২০২২




2 comments:

  1. খুব সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজানো একটি পত্রিকা। এই পত্রিকার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

    ReplyDelete
  2. ভালোলাগা রেখে যাই।

    ReplyDelete

Powered by Blogger.